১২ ফেব্রুয়ারী ২০১৩

দিনগুলি মোর সোনার খাঁচায়...


যখন শৈশবের কথা মনে পড়ে তখন তার প্রায় অনেক খানি থাকে স্কুল জীবনের কথা। নব্বই দশকের শুরুতে কলম হাই স্কুলে ভর্তি হই। সে সময়েই এই স্কুলে ভর্তি হতে গিয়ে প্রায় এখনকার মত কঠিন প্রতিযোগিতার মধ্যে পরতে হয়েছিল না । তখনকার সময়ে 'ভাল স্কুল' এ বৈশিষ্ট্য ছাড়াও ভবিষ্যৎ তৈরির জন্য গ্রামের ছেলেরা শহরে বা বৈশিষ্ট্য পূর্ণ স্কুলে পড়ালেখার চেষ্টা করতো । আমাদের গ্রামে ভালো স্কুল ছিলনা সেই সময় । তাই বুক ভরা স্বপ্ন নিয়ে আমার বাবা আমাকে কলম হাই স্কুলে ভর্তি করেন । কলম হাই স্কুলে ভর্তি করার কারণ সে সময় আমাদের থানা সিংরা তথা নাটোর  জেলার ভেতর কলম স্কুলের পড়ালেখার মান এবং পরীক্ষার ফলাফল ভালো ছিল । আর একটা কারণ হতে পারে আমার বাবাও এই বিদ্যালয়েই পড়ালেখা করেছে । আমার মনে আছে, যে দিন আমি আমার গ্রাম থেকে পড়ালেখার উদ্দেশে বের হই সেই দিন বুকের ভেতর গ্রামের প্রতি গভীর অনুভূতি টের পেয়েছিলাম । প্রথমে আমাকে কলমে আমার বাবার চাচার বাসায় রেখে আশা হয় এবং আমার দেখাশুনার মূল দায়ীত্ব দেওয়া হয় আমার বাবার চাচাত ভাই সাঈদ/ আলেফ কে । এই আলেফ কাকা সম্পর্কে যদি বলতে চাই  তাহলে একটা মহাভারত কাহিনী লিখতে হবে । আলেফ কাকা সম্পর্কে সুধু এই টুকুই বলি সে আমার প্রথম গুরু, যার মেধা ছিল আমার দৃষ্টিতে আইনস্টাইনের মতো, শুধু দারিদ্র্যতার কারণে আমার এই আলেফ কাকা তার জীবনের মাঝপথে এসে পথ হারিয়ে ফেলেছে ।

সেদিনের সকালটা একটু অন্যরকম ছিল । মেঘলা আকাশ, হিম হিম বাতাস, প্রকৃতির যেন মুড অফ । এতদিন পরে বিশ্লেষণ করে দেখলাম আমার মুড অফ ছিল কারণ তখনও নিজের ভেতর নতুন ক্লাস, নতুন বন্ধ-বান্ধব, নতুন স্কুল, নতুন শিক্ষককে কেমন করে রিসিভ করব তার বায়বীয় পরিকল্পনায় মাথার নিউরন সেলগুলো মহাব্যস্ত ছিল । স্কুলের ঘণ্টা বাজার অল্প কিছু সময় আগে স্কুলে উপস্থিত হলাম এবং আলেফ কাকা হযরত নামের একটি ছেলের সাথে পরিচয় করিয়ে দিল জাতে করে সে আমাকে ক্লাসের অন্য ছাত্র- ছাত্রীর সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় । ক্লাসে ঢুকে টিচারের সামনের টেবিলে আমি যখন বই রাখতে গেলাম তখন ঐ টেবিলে বসা এক্তি ছেলে বলল এখানে আমার এক বন্ধু বসবে । বন্ধু কোথায় কখন আসবে ইত্যাদি ইত্যাদি নিয়ে অনেক তর্কের পরে পিছনের সিটে বসলাম এবং মনটা খারাপ হয়ে গেল । বিশেষ দ্রষ্টব্য ঐ বন্ধুটির বাড়ি ছিল কালি নগর নামের গ্রামে এবং ঐ গ্রামের লোকেরা আজোঅব্দি ঘারতেরা নামে খ্যত । পিটি করার ঘণ্টা বাজলো , কোন কিছু না বুঝেই সবার সাথে লাইনে দাঁড়ালাম , পিতি টিচারের   নির্দেশ মতো আরামে দাঁড়ালাম, সজা হলাম, তালি বাজালাম - এক-দুই এক দুই তিন ----ডন হাত সামনের দিকে প্রসারিত করে শপত করলাম --- আমি ওয়াদা করিতেছি যে
                   -----দেশ ও দশের সেবায়  নিজেকে নিয়োজিত রাখিব
             ------- হে প্রভু আমাকে শক্তি দিন--------
                        আমি যেন বাংলাদেশের সেবা করিতে পারি ...... আমিন ।।

 - রাজু , ১-আগস্ট -২০১২
 - চলবে