০১ জুলাই ২০১৫


 প্রকৃতি অসমতা পছন্দ করে না:

প্রকৃতি শূন্যস্থান পছন্দ করে না । প্যাসকেলের সূত্র, বায়ুর চাপ বিজ্ঞানের এই বিষয়গুলো বোঝানোর সময় আমার হাই স্কুলের প্রিয় শিক্ষক কালাম স্যার প্রায়ই এই কথাটি বলতেন । কালাম স্যার আমার কাছে দার্শনিক তুল্য এবং আমার কাছে মনে হয় প্রকৃতি অসমতাও পছন্দ করে না ।

দুপুরে আইডিবি ভবন থেকে আগার গাঁ চৌরাস্তার দিকে যেতে হঠাৎই চোখ আটকে যায় ফুটপাথের পাশে ভ্যানে করে ফেরিওয়ালা এক দশ বারো বছরের ছেলের খাবার খাওয়ার দিকে। আশপাশে তেমন কোনো কোলাহল নেই। ফাঁকা জায়গায় পরিষ্কার ফুটপাথের ওপর বসে এমন তৃপ্তি করে কারও খাবার খাওয়ার দৃশ্য আমার জীবনের দেখা সবচেয়ে তৃপ্তির আহার দৃশ্য । ওখানে ছেলেটির দোকানের কাছাকাছি ফুটপাথের ওপর চায়ের দোকানে টুলে বসে অলস আড্ডায় সময় কাটাচ্ছেন কিছু স্কুল কলেজ পড়ুয়া যুবক । আমি টুলটাতে বসে কাঁচা লিকার চিনি কম দিয়ে একটা আদা চা অর্ডার দিয়ে একটু দূরে ওই ছেলেটির আহার দৃশে একটু একটু করে মুগ্ধ হচ্ছি । ছেলেটি একটা প্লাস্টিকের লাল রঙের বাটি খুলল । বাটিতে মোটা চাউলের সাদা ভাত, ভাতের উপরে একটি চিংড়ি মাছ আর একটু ঝোল । অনুভূতি অদ্ভুত, প্রথমে জিহ্বার ডগায় শল্পিক ভাবে স্পর্শ করাল । সারা শরীর যেন কী এক অনুভূতিতে চনমন করে ওঠে, শিরা-উপশিরায় ছড়িয়ে যায় একটা ঠাণ্ডা শিরশিরে তরলতা । এতগুলো ভাত আর এক টুকরো চিংড়ি মাছ, আমার ইন্দ্রিয়ের সকল দৃষ্টি এর পরবর্তী দৃশপট দেখার প্রতীক্ষায় । ছেলেটি চিংড়ীটাকে কিনারে অর্থাৎ যেখানে ভাত আর বাটি মিলিত হয়েছে সেখানে কাত করে রেখে দিল । ঝোল দিয়ে আঙ্গুলের নাড়ানীতে সে লোকমাগুলো মুখে পুড়ছিল আর চিংড়ীটায় জিহ্বা ছুঁয়ে দিয়ে আবার নির্দিষ্ট জায়গায় রাখছিল এবং প্রতিটাই দেখার মতো । একটু পাশ দিয়েই সাঁই সাঁই ছুটে চলছে মিরপুর, ফার্মগেট, উত্তরা, মতিঝিল, গুলিস্থান, সদরঘাট গামী যান্ত্রিক যান । ছুটে চলা মানুষের চীৎকার কোলাহল কোন কিছু তার সেই মুহূর্তের জগতকে ভাংতে পারছে না । শুধু ক ফোঁটা ঝোল দিয়েই দুই তৃতীয়াংশ ভাত খেয়ে ফেলল । ধীরে ধীরে চিংড়ীর মাথা খেল, দেহ খেল এবং পুরোটা ভাত খাওয়ার পরে চিংড়ীর লেজটায় চুষুক দিয়ে শান্তিময় অনুভূতিতে চোখ দুটো বন্ধ করল । আহঃ আমার এই শেষ দৃশটি কবরে যাবার আগ পর্যন্ত ভুলবো না । নিজে আমি অনেক দামী রেস্টুরেন্টে, ফাইভ স্টার হোটেলে অনেক দামী খাবার খেয়েছি এবং অনেকের খাবার খাওয়া দেখেছি কিন্তু ফুটপাথের ওই তৃপ্তি দেখতে পাই নাই কখনও । সৃষ্টি কর্তা অনেককে বাটি ভর্তি গলদা চিংড়ী, বাগদা চিংড়ী প্রতিদিন খাওয়ার পয়সা দিয়েছে কিন্তু ডাক্তার বলেছে তুমি কি বাঁচতে চাও না চিংড়ী খেতে চাও ?? 

আসলে প্রকৃতি অসমতা পছন্দ করে না । তার হিসাব আমরা লগ, ফাংশন, ক্যালকুলাস, জিওমিট্রি, বীজগণিত, পাটীগণিত দিয়ে করতে পারবোনা ।।।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন