জি পি এ -৫:
ছোট্ট শিশুটিকে পাবলিক পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করতে হিমশিম বাবা মা । জীবনের সুন্দর সময়গুলো মুখস্থ করার পেছনে ব্যয় করে বাচ্চারা। বেশিরভাগ বাবা মা পড়ার ক্ষতি হবে মনে করে বাচ্চাকে মাঠে খেলতে যেতে দেয়না । ধরে বেঁধে পড়ার টেবিলে নিয়ে যায়, লক্ষ্য বাচ্চাকে ডাক্তার, কবিরাজ, ইঞ্জিনিয়ার বানাবে । বাচ্চাদের পড়াশুনার কথা চিন্তা করে আত্মীয় স্বজনের বাড়ি পর্যন্ত বেড়াতে যায়না । প্রশ্ন পত্র ফাঁস হলে এই বাবা মাদের এত পরিশ্রম এত ত্যাগ স্বীকার সবচেয়ে আমাকে বেশি কষ্ট দেয় । যে বাচ্চাদের হাতে তৈরি হবে এক আশ্চর্য পৃথিবী তাদের হাতে তুলে দিচ্ছি নষ্ট পথের ভ্রমন টিকিট ( ফাঁস প্রশ্ন পত্র )। সৃজনশীল পদ্ধতির শিক্ষা ব্যাবস্থা চাই অথচ সৃজনশীল শিক্ষক তৈরি করতে চাইনা । শিক্ষাব্যবস্থায় পরীক্ষাগুলোর মূল লক্ষ্যই হয়ে পড়েছে শিক্ষার্থীদের মুখস্থ ক্ষমতা যাচাই করা । স্কুলগুলো পরীক্ষা আর জিপিএ–৫–এর পেছনে দৌড়ানোর জন্য শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ব্যতিব্যস্ত করে তোলে, পরীক্ষার আগে প্রশ্ন পত্র ফাঁস করে কমল মতি শিক্ষার্থীদের জিপিএ–৫ পাইয়ে দিয়ে নিজেদের প্রতিষ্ঠানের বাহবা কুড়ায়। কারণ, তাদের নিজেদের মূল্যায়নও সরকার ওই জিপিএ–৫ দিয়েই করে। সরকার কিংবা স্কুলের কথা শুনলে মনে হয় জিপিএ–৫–ই জীবনের সব। ‘মিনি কী করে’—এই প্রশ্নের উত্তরে এক শিক্ষার্থী লিখল: মিনি মুখে করে বাবার জুতা ড্রয়িং রুম থেকে বারান্দায় নিয়ে যায়। এই উত্তরে শিক্ষার্থীর পর্যবেক্ষণ এবং তা প্রকাশের চমৎকার নিদর্শন পাওয়া গেলেও শিক্ষক তার খাতায় শূন্য দিবে : মিনি রান্নাঘরে মাছের কড়াইয়ে মুখ দিয়ে মাছ চুরি করে এমন উত্তরে তাকে দশে দশ দেওয়া হত । বেচারা শিক্ষার্থী তাদের বাড়ির বিড়ালটিকে কখনো এই কাজটি করতে দেখেনি, যা দেখেছে তা লিখেছে কিন্তু তাতে তাকে মূল্যায়ন করা হবে না । ঠিক এভাবে আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতার বারোটা বাজাই। এ জন্যই বাচ্চারা কখনো সিলিং ফ্যানের দিকে তাকিয়ে দেখে না, সেটা ঘড়ির কাঁটার দিকে না উল্টা দিকে ঘোরে, গোধূলিবেলায় মেঘের ওপর মেঘ করে কি না, গাছে পাকা পেয়ারা বেশি মিষ্টি নাকি কেমিক্যাল দিয়ে, পিঁপড়া কি সাঁতার কাটতে পারে ? আমরাও বাচ্চারা যদি আমাদের এসব প্রশ্ন করলে তাকে থামিয়ে দেই। বলি, এসব কি তোমার পরীক্ষায় আসবে ? ফাঁস হওয়া প্রশ্নই শুধু পরীক্ষায় আসবে । আইনস্টাইন যদি না বুঝে মুখস্থ করতেন, আইনস্টাইনকে যদি ফাঁস প্রস্ন পত্র দিয়ে শুধু জি পি এ -৫ পাওয়ার জন্য পড়ত তাহলে কি বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটিত হতো ??
cheers...
উত্তরমুছুন